এশিয়ান কাপ বাছাই
এভাবেও ম্যাচ হারা যায়!
ক্রীড়া প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ১০ অক্টোবর ২০২৫ ০১:৪৭

ঢাকঢোল পিটিয়ে একটানা স্লোগান দিয়ে যাচ্ছিলেন হংকংয়ের শতাধিক সমর্থক। প্রেসবক্সের নিচের গ্যালারিতে গোটা ম্যাচেই আনন্দ-উল্লাসে মেতে ছিল দলটা। এমনকি হামজা চৌধুরীর দুরন্ত ফ্রি–কিক গোলের পরও। হংকং চায়নার সমর্থকেরা যেন জানতেন তাঁদের দল ঘুরে দাঁড়াবে এবং জয় নিয়েই ছাড়বে জাতীয় স্টেডিয়াম।
গতকাল রাতে শেষ পর্যন্ত বদলি ফরোয়ার্ড রাফায়েল মেরকিচের হ্যাটট্রিকে হংকং ৩ পয়েন্ট নিয়েই মাঠ ছেড়েছে। প্রথমে এগিয়ে গিয়েও টানা ৩ গোল হজম, এরপর ২ গোল দিয়ে সমতায় ফিরলেও ম্যাচের শেষ মুহূর্তে আবারও গোল খেয়ে ৪-৩ গোলে হার। এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে এমন নাটকীয় হার যেন ম্যাচ শেষে মানতেই পারছিলেন না হতাশায় ভেঙে পড়া বাংলাদেশের ফুটবলাররা।
এই জয়ে হংকং ৭ পয়েন্ট নিয়ে টানা দ্বিতীয়বার এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলার সম্ভাবনা জোরালো করেছে। ৫ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে সিঙ্গাপুর, গতকাল সিঙ্গাপুরে যারা ভারতের বিপক্ষে এগিয়ে থেকেও শেষ মিনিটে গোল খেয়ে ১-১ ড্র করেছে। ভারতের পয়েন্ট ২, বাংলাদেশের ১। জামাল ভূঁইয়াদের এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে যাওয়ার সম্ভাবনা কার্যত শেষ।
অতিরিক্ত ৯ মিনিট সময়ের ষষ্ঠ মিনিটে শমিত সোমের হেডে দারুণ গোলে স্কোরলাইন যখন ৩-৩, ড্রয়ের স্বপ্ন জেগেছিল বাংলাদেশের। কিন্তু শেষ ক্ষণে আবার সেই রক্ষণ দুর্বলতা, আবারও সহজেই গোলের রাস্তা তৈরি করে হংকং ম্যাচটা ছিনিয়ে নেয়। স্নায়ুচাপ কীভাবে ধরে রাখতে হয়, সেটি যেন এখনো রপ্ত করতে পারেননি বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা।
গ্রুপ–সেরা হয়ে চূড়ান্ত পর্বের আশা বাঁচাতে জয়ের বিকল্প ছিল না বাংলাদেশের সামনে। শুরুর কয়েক মিনিট চাপে থাকলেও ১৩ মিনিটে উল্লাসে মেতে ওঠার উপলক্ষ পেয়ে যায় স্বাগতিকেরা। হামজা চৌধুরীর দুর্দান্ত ফ্রি–কিক গোলে বাংলাদেশ যখন এগিয়ে থেকে প্রথমার্ধ শেষ করার স্বপ্ন যখন দেখছিল, ঠিক তখনই পাল্টা গোল। প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার ৩০ সেকেন্ড বাকি থাকতে ফাঁকায় বল পেয়ে আলতো টোকায় ১-১ করেন হংকংয়ের ব্রাজিলিয়ান বংশোদ্ভূত ফরোয়ার্ড এভারটন কামারগো।
এর আগে হামজার গোলটা ছিল দেখার মতো। হংকংয়ের লেফটব্যাক যেখানে দাঁড়ান, এর কাছাকাছি জায়গা থেকে ফ্রি-কিক পায় বাংলাদেশ। হামজা বল বাঁক খাইয়ে জালে পাঠাতে চাইছিলেন। শটটাও হলো দুর্দান্ত। হংকংয়ের খেলোয়াড়েরা বল ক্লিয়ার করতে লাফিয়ে ওঠেন, ফরোয়ার্ড মাত ওর মাথায় হালকা ছোঁয়া লেগে বলে চলে যায় জালে। বাংলাদেশের হয়ে ছোট্ট ক্যারিয়ারে হামজার এটি দ্বিতীয় গোল।
গত ১০ জুন জাতীয় স্টেডিয়ামেই সিঙ্গাপুরের বিপক্ষ হামজা রক্ষণে সহায়তার পাশাপাশি আক্রমণেও নেতৃত্ব দেন দলকে। তবে গতকাল ম্যাচের প্রথমার্ধে তিনি একটু রয়েসয়েই খেলছেন। প্রথমার্ধের শেষ দিকে হেডে বল ক্লিয়ার করে রুখে দিয়েছেন হংকংয়ের আক্রমণ।
হংকং বেশ গতিময় ফুটবলই খেলছে। শুরু থেকেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ছিল অতিথি দলের কাছে। সপ্তম মিনিটেই গোল পেতে পারত হংকং। ফরোয়ার্ড মাত ওর প্লেসিং যায় পোস্টে বাতাস লাগিয়ে। আরেকটি আক্রমণে সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ান গোলকিপার মিতুল মারমা। ৪০ মিনিটে ব্রাজিলিয়ান বংশোদ্ভূত ফরোয়ার্ড এভারটন কামারগোর প্লেসিং অল্পের জন্য চলে যায় বাইরে। বেঁচে যায় বাংলাদেশ, তবে শেষ রক্ষা হয়নি।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই গোল খেয়ে বসে বাংলাদেশ। হংকংয়ের আক্রমণে এলোমেলো রক্ষণ, জুনিয়র সোহেল রানা ব্যাক পাস দিয়ে বিপদ ডেকে আনেন। বল পেয়ে যান অরক্ষিত বদলি ফরোয়ার্ড রাফায়েল মেরকিচ। ফরাসি বংশোদ্ভূত ফরোয়ার্ড সহজেই বল প্লেসিং করেন। ৭১ মিনিটে হংকং তৃতীয় গোলটা করেছে অনেকটা বলেকয়ে। ডিফেন্ডার সাদ উদ্দিনের পায়ের ফাঁক দিয়ে গোলের পথ তৈরি করেন হংকংয়ের ফরোয়ার্ড এভারটন কামারগো। বাকি কাজটা সেরেছেন সেই রাফায়েল মেরকিচ, ম্যাচে সেটি তাঁর দ্বিতীয় গোল।
হংকংয়ের প্রথম গোলের পরই বাংলাদেশের রক্ষণ হয়ে যায় এলোমেলো, গোলের চিন্তায় হয়তো কিছুটা অমনোযোগীও। রক্ষণটা ভালো হয়নি মোটেও। কৃতিত্ব পাবেন হংকংয়ের ফরোয়ার্ডরা। তাঁদের বুদ্ধিদীপ্ত পাস, জায়গা বদল অনেক সময়ই গোলকধাঁধা হয়ে এসেছে বাংলাদেশের রক্ষণের সামনে। তৃতীয় গোলের পর রক্ষণে পাঠানো হয় যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ডিফেন্ডার বাংলাদেশের হয়ে অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা জায়ান আহমেদকে। ভালোই খেলেছেন, ভূমিকা রেখেছেন আক্রমণেও। খানিক বাদে আসেন তপু বর্মণ।
দ্বিতীয় গোলের পর কোচ জামাল-ফাহামিদুল ও শমিত সোমকে মাঠে পাঠান। তুলে নেন দুই সোহেল রানা আর ফয়সাল আহমেদকে। কিন্তু সব অস্ত্র ব্যবহার করেও শেষ পর্যন্ত হারতেই হয়েছে। বাংলাদেশের ফুটবলাররা বেশ কিছু আক্রমণ নিজেরাই নষ্ট করেছেন এলোমেলো শট নিয়ে।
৮৪ মিনিটে স্কোরলাইন ৩-২। জামালের ফ্রি–কিক থেকে ফাহামিদুলের ব্যাকভলি, হংকং গোলকিপার বল ক্লিয়ার করতে পারেননি। অরক্ষিত মোরছালিন আলতো টোকায় বল জালে পাঠালে দর্শকেরা নড়েচড়ে বসেন। এরপর যোগ করা সময়ের নবম মিনিটে শমিতের হেডে আসে সমতা। এর দুই মিনিটের মধ্যে একেবারে শেষ মুহূর্তে হংকংয়ের হয়ে জয়সূচক গোলটি করে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন মেরকিচ।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: